শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫১ অপরাহ্ন
ভয়েস প্রতিবেদক:
উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২২) মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮ ও ৯ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুড়ে গেছে ৯ হাজারেও বেশী রোহিঙ্গাদের ঝুঁপড়ি ঘর। এছাড়াও পুড়ে গেছে দেশী বিদেশী বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও বহু হতাহতের আশংকা করা হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমদ নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে শতাধিক বাংলাদেশী পরিবারের বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। এখনো কোন ধরণের নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবিও কাজ করেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম রাতে জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ও সেনাবাহিনী সহ ৭টি ইউনিট কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে আগুনে কি পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্নয় করা কঠিন।
উখিয়ার বালুখালী ৮নং এপিবিএন’র অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো: শিহাব কায়ছার জানিয়েছেন, ‘আগুনে বালুখালীতে অবস্থানরত ৪নং এপিবিএনের ব্যারাক আংশিক পুড়ে গেছে। তবে অস্ত্র ও মুল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়াও বেশকিছু এনজিও অফিস, স্কুল-মাদ্রাসা পুড়ে গেছে। হতাহতের খবর এখনো পাওয়া যাযনি।’
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আব্দুল হামিদ জানান, আগুনের তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় ৫শতাধিক ঘরসহ অন্তত এক হাজারেও বেশী ঝুঁপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে মার্কেট বালুখালী বলিবাজার। এতে ৫০ কোটি টাকার মুল্যের মালামাল পুড়ে গেছে।’
মিন আরা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, ক্যাম্পটির ৮ নম্বর ব্লক থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। একটি ছনের ছাউনির ঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আগুন দেখে আবদুস শুকুর তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়ে দৌঁড়ে কোন রকমে আশ্রয় নেয় কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে।
উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিয়ে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারুপ করে আসছে। তিনি বলেন, তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনার তথ্য।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দ্দৌজা জানান, উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আকস্মিক অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এখনো পর্যন্ত কি পরিমাণ রোহিঙ্গাদের বসতি ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি।
তিনি আরও জানান, “ ক্যাম্পে আগুন লাগার শুরু থেকে ফায়ার সার্ভিসের উখিয়া স্টেশনের দুইটি ইউনিটের পাশাপাশি টেকনাফের ২ টি, কক্সবাজারের ২ টি এবং রামুর ১ টি ইউনিট ৯ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আগুণের সূত্রপাতের কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে দীর্ঘ ৬ঘন্টা অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাজার হাজার লোক আশ্রয়স্থল হারিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে। আশ্রয়হারা লোকজন হারিয়েছে তাদের ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরের সব মালামাল। আবার অনেকেই হারিয়েছে তাদের সন্তান-সন্ততিও।
ভয়েস/আআ